গল্প- বিতান চক্রবর্তী
সৃজন
5/27/20251 min read


আজ শনিবার। গুরুদেব বাড়িতে হরির লুঠ দেবেন। কালই দেড় কিলো বাতাসা নিয়ে এসেছেন। ছেলেটা কলেজ টপকে দু-বছর নিপাট বেকারত্ব কাটিয়ে চলতি হপ্তাতেই সিভিক পুলিশের উর্দি পেয়েছে। গুরুদেব অনেক কানেকশন পুড়িয়ে চাকরিটা করিয়েছেন। ছেলে ভগাও কম করেনি। দাদাদের তোয়াজ, ফি হপ্তায় ঝান্ডার তলায় নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা ইত্যাদি পরীক্ষায় পাশ করে তারপর থানায় গিয়ে লিস্টে নাম উঠেছে। ‘লোকে এসব চাকরিকে পাত্তাই দেয় না। ভাবে সব তেল মাখিয়ে হয়ে যায়, নিজের ছেলের ক্ষেত্রে একবার করে দেখুক লোকে, তখন বুঝবে! সরকারি খাতা থেকে মাইনে পাওয়া অত সহজ?’ গুরুদেব সেদিন বাজারে আড্ডার ঠেকে বলছিলেন কথাগুলো। সব শুনে হাই স্কুলের পিটি স্যার, রমাদা বললেন, ‘ছেলেকে আশীর্বাদ দিও। এসব কাজে শরীর স্বাস্থ্যের প্রয়োজন হয়। রোজ যেন শরীরচর্চা করে, ভালো প্রোটিন খায়। আর বলো, ছেলেবেলায় যে সমাজবন্ধুদের কথা পড়েছিল, এখন সে তাই। তার যেন মান রাখে’।
‘এই লেখ, সমাজবন্ধু কাকে বলে?’
একটি শতচ্ছিন্ন বই হাতে নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর লেখাতে বসেছে গুরুদেব। আজ তাড়াতাড়ি করতে হবে। বিকেলের পুজোর অনেক কাজ পরে আছে। তেলি মন দিয়ে কান খোঁচাচ্ছে পেনের আগাটা দিয়ে। ‘এই হারামজাদা, পেনটা কি কান খোঁচাবার বস্তু?’ গুরুদেব খিঁচিয়ে ওঠেন। তেলি পেন কান থেকে নামিয়ে, আগাটা জামায় মুছে নেয়।
‘... সিভিক পুলিশ আমাদের নতুন সমাজবন্ধু। তারা রাস্তায় গাড়িঘোড়া চলাচলে সাহায্য করে আমাদের সাহায্য করেন’। সংজ্ঞা লেখাতে লেখাতে নিজের ছেলেটার জন্য একটা গর্ব অনুভব করেন গুরুদেব। মাইনে কম পাক কিন্তু ইজ্জত আছে।
‘কিন্তু স্যার...’ তেলি পেনের মাথাটা দিয়ে পা চুলকতে চুলকতে আপন মনে বলে ‘সিভিক পুলিশ তো সাহায্য করে না, তারা সাহায্য চায়!’ গুরুদেব থমকে যায়। বলে কি ছেলেটা? ‘তুই কবে দেখেছিস যে পুলিশ সাহায্য না করে সাহায্য চেয়েছে?’
‘মাঝে মাঝেই দেখি। রাতে বাঙালের দোকানে গেলেই দেখি। ওই চৌপথিতে সব লড়ি থামিয়ে ওরা হাত পাতে। আর বাঙালকাকু বলে, দেখ বেটাদের ভিক্কে করা শুরু হয়ে গেলো!’
গুরুদেবের কানের লতি লাল হয়ে ওঠে। আজ এই হতচ্ছাড়াকে পেদিয়ে গুল না বানালে তার শান্তি নেই। বেতটা কোথায় গেলো!