আমাদের সমসাময়িক কিছু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর প্রেমের কথা - সমীর রায় (কংগ্রেস)

রাজ্য

5/14/20251 min read

(প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস)

যে বিষয়টির উপরে আমাকে লিখতে বলা হয়েছে-তা সত্যিই কিছুটা অভিনব। কারণ- বাঙালির প্রেম যতটাই সহজ ও স্বাভাবিক হোক না কেন, রাজনীতিবিদ-তা তিনি যে দলেরই হোক না কেন-তাঁর প্রেমের অভিব্যক্তি কিন্তু কিছুটা নৈর্ব্যক্তিক বলেই প্রতীয়মান হতে পারে।

আমার ছোটবেলায় একই রাজনৈতিক দলের সহকর্মীদের মধ্যে সখ্যতা বা প্রেম অবশ্যই চোখে পড়েছে। আমি যখন হাওড়া জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলাম (১৯৬৮ সালের আগের কথা), তখন আমারই দু'ই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী মানস দাশগুপ্ত ও কমলেশ ঘোষ আমাদের অন্য দুই সহকর্মীর প্রেমে পড়েছিল। বিনা ও সতী ( স্বাগতা)। তারা দীর্ঘদিন সুখে ঘর সংসারও করেছে। তার মধ্যে বিনা ও কমলেশ এখন আর নেই। (উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সতী হল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বোন। প্রণব দা তখন হাওড়ায় থাকতেন। অধ্যাপনা করতেন।)

দীর্ঘদিনের প্রেম দেখেছি আমার নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি সঙ্গে দীপা ঘোষের। আমরা হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সে ঘটনা অবশ্য ছিল সাধারণের অগোচর। সেই সময় একবার সুবর্ণরেখা নদীর পাড়ে দীপা দেবীর যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল তার কোনও এক সম্ভবতঃ নাট্যকর্মশালার প্রয়োজনে (প্রাক্ বিবাহ সময়কালে তিনি একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।)। সেই সময় মোবাইল ছিল না। কলকাতা থেকে ট্রাঙ্ক কল বুক করে ফোনে কথা বলতে হতো। প্রিয় দা আমাকে ফোনে বলেছিল, খড়গপুর স্টেশন থেকে দীপাকে নিয়ে যেতে। তাকে কী করে চিনব জিজ্ঞাসা করলে জবাব ছিল সাবের মুখে তিনি আসবেন সবুজ পাড় শাড়ি আর বড় সবুজ রঙের টিপ পরে। (প্রিয়দা এখন নেই। কিন্তু দীপা বৌদির বড় গোল টিপ এখনও আছে।) আমাদের প্রাক্তন বিধায়ক হরিশ মহাপাত্রের বাড়িতে ওদের দলের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল।

তবে রাজনৈতিক কর্মীদের কাজ করার ফাঁকে পরিচয় এর সুবাদে প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে ছোট একটি দল এস ইউ সি আই। দলীয় কর্মীদের মধ্যে প্রেমজ বিয়ের পরিসংখ্যানে আমার মনে হয় ওই দলটি অবশ্যই এক নম্বরে থাকবে।

লেখাটি শেষ করি আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী অশোক ভট্টাচার্যের প্রেম ও বিবাহ সংকট নিয়ে। তিনি আমাদের সময় ইউনিভার্সিটির ল-কলেজ ছাত্র ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। অশোক আলিপুর আদালতের বরিষ্ঠ আইনজীবী। ওর সঙ্গে প্রেম ছিল আর এক দীপার। সেই ছিল আমাদের ২৪ পরগনার প্রবীণ নেতা অম্বর ব্যানার্জীর ভাইঝি। ব্যাপারটা খুব গুরুতর ও আকার নেয় যখন অশোকের হবু শ্বশুরমশাই মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজা শুরু করেন। অশোকের দীর্ঘ প্রেমকে এক কথায় তিনি নস্যাৎ করেন বেকার পাত্রীর সঙ্গে মেয়ের বিয়ের আলোচনাতে অনীহা প্রকাশ করে।

তখন আমাদের প্রাদেশিক দফতর আচার্য জগদীশ বসু রোডে (এখন সেটা মাদারটেরেদার কার্যালয়) সেই বাড়িটিতে। অশোকের চিন্তা ক্লিষ্ট মুখ দেখে আলোচনায় সত্য প্রকাশিত হলো। সে বেকার পাত্রীর কোন ভবিষ্যৎ নেই। তখন আমি পুরোদস্তুর ট্রেড ইউনিয়ন করি এবং ইউনিয়নগুলির মধ্যে খুবই শক্তিশালী ইউনিয়ন তখন ইন্ডিয়ান অক্সিজেনের ইউনিয়ন। সেখানে আবার তখন কিছু ক্লারিক্যাল পদ খালি হয়েছে। নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। অশোককে দিয়ে দরখাস্ত করালাম। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলে অশোকের কথা বললাম। কিন্তু ওরা বললেন অশোক 'ওভার কোয়ালিফায়েড'। (ও ছিল এমএ, এলএলবি।) তখন আবার বিএ-এর সার্টিফিকেট দিয়ে নতুন দরখাস্ত জমা করে পরীক্ষায় বসে অশোকের চাকরি হল। তার ছয় মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে অশোক বাবু আলিপুর আদালতে ওকালতি করতে লেগে গেলেন। এখনও মাঝে মধ্যে আদালতে যান।

মোট কথা, একসঙ্গে দীর্ঘদিন একই রাজনৈতিক মঞ্চে কাজ করে সহমর্মিতা আর সহযোগিতা ক্রমশ প্রেম-ভালোবাসায় পর্যবসিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটি আঙ্গিক-এটাই আমার ধারণা।

(ব্যক্তিগত কলম)

সমীর রায়। ছবি- সংগৃহীত।